আগে করোনা পরীক্ষা, পরে চিকিৎসা আগে করোনা পরীক্ষা, পরে চিকিৎসা – Narail news 24.com
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
পিছিয়ে গেল আইএমএফের চতুর্থ কিস্তির ঋণ নড়াইলে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ২০ দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন নড়াইলে বালক-বালিকাদের সাইক্লিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত নড়াইল কালেক্টরেট স্কুলের দুইদিন ব্যাপী বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন নড়াইল পৌর বিএনপি নব-নির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে গণসংবর্ধনা নড়াইল প্রেসক্লাবের নব গঠিত কমিটির সাথে জামায়াত নেতাদের মতবিনিময় নড়াইলে ভ্যাট ও ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্টিত নড়াইল প্রেসক্লাবের নবগঠিত কমিটির সাথে মতবিনিময় সভা করলেন জেলা প্রশাসক  সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নতুন বাংলাদেশের চার্টার হয়ে থাকবে – প্রধান উপদেষ্টা পরিবেশ বান্ধব নড়াইল জেলা বিনির্মানে প্রচারনা ও জনসচেতনামুলক র‌্যালী অনুষ্টিত

আগে করোনা পরীক্ষা, পরে চিকিৎসা

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

নড়াইল নিউজ ২৪.কম ডেস্ক:

ভর্তির আগে করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক করায় দেশে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। দুই বছর ধরে চলা ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবে ক্যানসার রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা পেতে বেশি সময় লাগছে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে প্রান্তিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেই। রাজধানীতেও যে কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতালে আছে, সেগুলোতে শয্যা সংকট।

জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন মাগুরার ৫৮ বছর বয়সী রোকেয়া বেগম। প্রতি মাসে কেমোথেরাপি নেন তিনি। প্রতিবার থেরাপি দেওয়ার বয়োবৃদ্ধ রোগীকে করোনা পরীক্ষা করতে বলেন চিকিৎসক। তবে এই হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা ব্যবস্থা নেই।
অন্য হাসপাতাল নমুনা দিয়ে তিন-চার দিন অপেক্ষা করতে হয়। গত নভেম্বরে করোনা আক্রান্ত হন রোকেয়া। ফলে থেরাপি দেওয়া বন্ধ রেখে করোনা চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হয়। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে ক্যানসারে চিকিৎসা না নিয়েই গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান এই নারী।

স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে রওশন আরা বেগম কুমিল্লা থেকে চিকিৎসা নিতে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। গত ডিসেম্বরে করোনা আক্রান্ত হওয়ায় কেমো দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। করোনা থেকে সরে উঠলেও রওশনের ক্যানসারের জটিলতা বাড়ে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, রওশন আরার স্তন ক্যানসার প্রথম পর্যায়ে থাকলেও করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে কেমো দিতে দেরি হওয়ায় তার ক্যানসার বেড়ে তৃতীয় স্তরে পৌঁছেছে।

দেশে সবচেয়ে বড় একটি ক্যানসার হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় সেবা নিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। শুধু করোনা নেগেটিভ হওয়ার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর শুরু হচ্ছে কেমোথেরাপি, তাতে প্রক্রিয়াটি পিছিয়ে যাচ্ছে চার থেকে পাঁচ দিন।

ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, ক্যানসার রোগীদের করোনা হওয়ায় ক্যানসার চিকিৎসা শেষ না করেই ৩০ শতাংশ রোগী বাসায় ফিরছেন। চিকিৎসা শেষ না করা রোগীদের ৭৫ শতাংশই এক বছরের মধ্যে মারা গেছেন বলে ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের করা এক গবেষণায় উঠে এসেছে। একই সঙ্গে করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে ক্যানসার চিকিৎসা বন্ধ থাকায় রোগীর শরীরে ক্যানসারের জটিলতা বাড়ছে। করোনার সময়ে ৫০ শতাংশ কম রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান গ্লোবোক্যানের সর্বশেষ হিসাব বলছে, দেশে বর্তমানে ১৫ লাখ ক্যানসার রোগী রয়েছে। এ ছাড়া প্রতি বছর ১ থেকে দেড় লাখ মানুষের নতুন করে ক্যানসার শনাক্ত হচ্ছে। প্রতি বছর ১ লাখ ৯ হাজার রোগী ক্যানসারে মারা যায়। সে হিসেবে গত দুই বছরে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে ২ লাখ ১৮ হাজার মানুষ মারা গেছে।
স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনার মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হচ্ছে ক্যানসারে মৃত্যু। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীরা করোনা আক্রান্ত হলে মৃত্যুর ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। দেশে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কত জন মারা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে এমন তথ্য না থাকলেও জানানো হয়েছে, এক বছরে ৬৭ শতাংশ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

শয্যা ফাঁকা নেই, রোগীরা রাস্তায়

ঢাকায় ১৫০ শয্যার জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হয় ৫০০ জনের। সারা দেশে ক্যানসারের সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকার এই হাসপাতালে সব সময় রোগীর চাপ থাকে।

দেখা যায়, হাসপাতালটির নিচতলায় বি ব্লকের গেটের সামনে খোলা আকাশের নিচে ৩০ জন রোগী ও স্বজন কয়েক দিন করে রাত্রিযাপন করছেন। তাদের অভিযোগ, আসন না পাওয়ায় হাসপাতালে বাইরে এভাবে থাকতে হয়। এক সপ্তাহ পর পর কেমোথেরাপি দেওয়ার কারণে স্বজনদের নিয়ে এভাবে থাকেন তারা।

বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন। অন্তত দুইশ রোগী টিকিট সংগ্রহের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। টিকিট পাওয়ার পর দ্বিতীয় তলায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য আবারও দাঁড়াতে হচ্ছে লাইনে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর অনেকে ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ছেন। কেউ কেউ মাদুর পেতে শুয়ে আছেন। রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনদের চোখে-মুখেও রাজ্যের ক্লান্তি।

খোলা আকাশের নিচে থাকা রহিমার সঙ্গে কথা বলেন জানা যায়, তিনি মাগুরা থেকে তার বোনের ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকায় এসেছেন। ৫ ফেব্রুয়ারি তার থারাপি দেওয়া কথা। এ জন্য করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। আসা-যাওয়ার বাস ভাড়া বেশি হওয়ায় শীতের রাত উপেক্ষা করে হাসপাতালের বারান্দায় আছেন তারা। তিনি আরও জানান, অপারেশনের জন্য গড়ে এক মাস, কেমোথেরাপির জন্য দুই থেকে তিন সপ্তাহ, বিকিরণ চিকিৎসার জন্য চার মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে ক্যানসার চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২৬টি প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও সমন্বিত ক্যানসার চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে মাত্র ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটে। তবে এই হাসপাতালে বছরে মাত্র ৩০ হাজার রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকি ১ লাখ ২০ হাজার রোগী ২৫টি কেন্দ্রে সেবা নিচ্ছে। সেই সব রোগীর চিকিৎসায় তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই।

দেশে করোনা চিকিৎসায় আট বিভাগের আটটি ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। তিন-চার বছরে এগুলো চিকিৎসা দেয়ার উপযোগী হবে।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের দাবি, ক্যানসার রোগীর চিকিৎসা সংকট নিরসনে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে চিকিৎসাও সম্প্রসারিত করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যানসার রোগী দ্বিগুণ হবে। তাই সেভাবে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। কিছু বেসরকারি হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসার সুযোগ থাকলেও টাকার অভাবে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্তরা সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

করোনায় ক্যানসার রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে

করোনা মহামারি ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হওয়া এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। কেমোথেরাপি দিতে দেরি হচ্ছে। এ কারণে মৃত্যু বাড়ছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বৈষম্য কমাই, ক্যানসার সেবায়।’

ক্যানসার রোগতত্ত্ববিদ ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, করোনাভাইরাস সংকট শুরু হওয়ার পর ক্যানসার আক্রান্তদের যত্নের ওপর তীব্র প্রভাব পড়েছে। মহামারির কারণে বিশ্বের অনেক দেশে ক্যানসার রোগীর সেবা আংশিক বা পুরোপুরি বিঘ্নিত হয়েছে। এ কারণে আগামী বছরগুলোতে ক্যানসারে আক্রান্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যায় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞ মহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনার শুরুর দিকে ক্যানসার রোগী আসার পরিমাণ অনেক কমে যায়। এ ছাড়া করোনা পরীক্ষা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়। তবে এখন করোনা উপসর্গ না থাকলে কেমোথেরাপি বা অপরারেশন করাতে করোনা সনদ লাগছে না।

তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এক বছরে ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে সেবা নেওয়া রোগীর ৪৫ শতাংশই মারা গেছেন। যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সবাই ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছে না এটা বলার সুযোগ নেই। তবে করোনা মহামারি থেকে গেলে মৃত্যু বাড়বে।’

দেশে ক্যানসার চিকিৎসার সার্বিক চিত্র তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘দেশে আট বিভাগে আটটি ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এটির কাজ শেষ হলে শহরে চাপ কমে আসবে। রেডিওথেরাপি যন্ত্রপাতিসহ আধুনিক বিভাগ গড়ে তোলা হবে।’

© এই নিউজ পোর্টালের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি

ফেসবুকে শেয়ার করুন

More News Of This Category
পরীক্ষামূলক সম্প্রচার
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin
x