নড়াইল নিউজ ২৪.কম বিনোদন ডেস্ক:
ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনির বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ বলছে, এক সহযোগীর ‘ড্রেসকোড’ নিয়ে প্রশ্ন করতেই চটে যান তিনি, ভাঙেন বেশ কিছু আসবাব। ঘটনার সময়েই গুলশান-১ এলাকার অল কমিউনিটি ক্লাব থেকে ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করে বাহিনীটি।
ওই দিন রাতে পরীমনি ও তার সঙ্গীরা কী কী করেছেন তা বুধবার রাতে গণমাধ্যমকে তুলে ধরেন অল কমিউনিটি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট কে এম আলমগীর ইকবাল।
তিনি জানান, পরীমনির গত ৭ জুন রাত সোয়া ১টার দিকে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে অতিথি হিসেবে আসেন। নিয়ম না মানা এবং ক্লাবের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পরীমনি ও তার সঙ্গে থাকা দুজনকে চলে যেতে বলে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তা না শুনে ক্লাব বারে প্রায় ১৫টি গ্লাস, ৯টি অ্যাস্ট্রে ও বেশ কিছু হাফপ্লেট ভেঙেছেন।
আগের ঘটনাকে এখন সামনে আনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরীমনি।
রাত সোয়া ১০টার দিকে কয়েকটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি (অল কমিউনিটি ক্লাবে) গিয়েছিলাম। সেটা তো সিসিটিভির ফুটেজে আপনারা দেখেছেন। কিন্তু অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা যদি ঘটিয়ে থাকি, তাহলে সেটা এতদিন পর কেন আসলো। তারা তো আমার মতো ভিকটিম হয়নি, তাদের তো কোনো বাধা ছিল না। সঙ্গে সঙ্গেই তারা অভিযোগ করতে পারতেন। এটা তো খুবই স্পষ্ট।’
ক্লাব কর্তৃপক্ষ
ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে অল কমিউনিটি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের ক্লাবে কিছুদিন আগে ছোট একটি অনাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আপনারা জানেন, সোশ্যাল ক্লাবের টাইম লিমিটেশন আছে। আমাদের ক্লাব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মাত্র দুই থেকে তিনজন ক্লাবে উপস্থিত ছিলেন, তারাও চলে যাচ্ছিলেন। সে সময় আমাদের ক্লাবের একজন অতিথি ইমার্জেন্সির কথা বলে এই আসতেছি বলে বাইরে গিয়েছিলেন।
‘যাওয়ার পর উনি আর আসতে পারছিলেন না, বিকজ অফ ক্লাবের টাইমিং। সিকিউরিটি গার্ডকে ফোন করে অনুমতি চাচ্ছিলেন যে উনি আবার আসতে চায়। অনুমতি চাওয়াতে আমাদের ক্লাবের অ্যাডমিন সাহেবকে তিনি বলেছেন যে, তার মোবাইল ফোন ও কাগজ রেখে গিয়েছিলেন। তখন অ্যাডমিন তাকে আসতে দেয়ার অনুমতি দেন।’
ক্লাবের প্রেসিডেন্ট জানান, ক্লাবের ওই মেম্বারই পরীমনিসহ তিনজনকে নিয়ে একটু পর ক্লাবে ঢুকতে চান।
আলমগীর ইকবাল বলেন, ‘তখন দুইজন ফিমেল ও একজন মেল এসে উপস্থিত হয়। ক্লাবের কিছু নিয়ম কানুন আছে। সেটি হলো কোনো মেল যদি ক্লাবে আসে, তবে তাকে ড্রেসকোড মেইন্টেইন করতে হবে। কিন্তু সেই মেল ভদ্রলোক হাফ প্যান্ট ও স্যান্ডেল পরে এসেছেন। তখন আমাদের অ্যাডমিন ও ফুড অ্যান্ড ব্রেভারেজের পরিচালক বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা এটা দেখে বলেছেন যে, আপনি তো ক্লাব রুলস ভায়োলেট করেছেন। আপনি তো হাফ প্যান্ট পরে এখানে আসতে পারেন না। তারপর উনারা ক্ষিপ্ত হয়ে যান। ক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া উনাদের আচার আচরণ গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তারা (কর্তৃপক্ষ) বলেছেন, রাত অনেক হয়েছে আপনারা চলে যান।’
এরপরই পরীমনি ও তার সঙ্গীরা ভাঙচুর শুরু করে বলে জানান ক্লাব প্রেসিডেন্ট। বলেন, ‘কিন্তু তারা চলে যাচ্ছিলেন না দেখে আমাদের পরিচালক তাদের চলে যেতে বলেন। তারপর আমাদের যে সদস্য, মানে যে সদস্যের মাধ্যমে তারা এখানে এসেছিলেন, সেই সদস্যও তাদের চলে যেতে অনেক অনুরোধ করেন। কিন্তু উনারা যাচ্ছিলেন না দেখে ঐ সদস্যই চলে গেল। তখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে চেঁচামেচি শুরু করেন; গ্লাস, অ্যাশট্রে ছুড়ে মারতে থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রায় ১৫টি গ্লাস উনারা ভেঙেছেন, প্রায় ৯টি অ্যাশট্রে ছুড়ে মেরে ভেঙেছেন এবং বেশ কিছু হাফপ্লেট ছুড়ে ছুড়ে মেরে ভেঙেছেন। উনারা এই প্রথম এসেছেন। এর আগে উনাদেরকে চিনতামও না, জানতামও না। পরে আমরা শুনেছি যে উনাদের একজনের নাম পরীমনি। কিন্তু আমরা তা জানতাম না।’
আলমগীর ইকবাল বলেন, ‘তাদের ক্লাব বন্ধ হলে কোনো সার্ভিস দেয়া হয় না। কিন্তু বিকজ অফ দুজন ফিমেল এসেছে। উনারা বারবার রিকুয়েস্ট করেছে। তখন যারা ছিল তারা উনাদের একটু খানি সার্ভ করেছেন। কিন্তু উনি এসব এনজয় না করে ৯৯৯ এ কল করে পুলিশ ডেকেছেন। উনারা সেখানে হাফ এন আওয়ার সময় কাটিয়েছেন।’
ভাঙচুর করে পুলিশও ডাকেন তারা:
অল কমিউনিটি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আলমগীর ইকবাল বলেন, ‘এক পর্যায়ে উনারা ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশ কল করেন। তখন পুলিশ আসে, পুলিশ এসে দেখতে পান যে, উনি এগুলা ছুড়ে মারছেন। তখন পুলিশ উনাদের জিজ্ঞেস করেন আপনারা এখানে কেন আসছেন, কেন আমাদের কল করছেন? তখন তারা বলে যে, আমাদের সাথে এই হয়েছে ওই হয়েছে। উনারা (পুলিশ সদস্যরা) বলেন যে, এরকম তো কিছু দেখছি না। তখন কেউ ছিলও না। দুইজন ওয়েটার ছিল আর এই তিন চারজন মানুষ ছিল।
‘তারপরে পুলিশ ভাইয়েরা ওয়াকিটকির মাধ্যমে উপরে জানতে চায় যে তারা এখন কী করবে। ওয়াকিটকির আওয়াজ বাইরে যাচ্ছিল। তখন উপরের থেকে নির্দেশ আসে যে, উনারা যদি এমন করে তাহলে উনাদেরকে বের করে দিয়ে আপনারা চলে যান। তখন ঐ আওয়াজ শুনে উনারা কিছুটা ঠান্ডা হোন, আর পুলিশ ভাইদের কথা মত সেখান থেকে চলে যান। তারপর পুলিশ ভাইয়েরাও চলে যান।’
আলমগীর ইকবাল জানান, সাধারণত ক্লাবে অবান্তর কিছু হলে প্রেসিডেন্ট কিংবা সেক্রেটারিকে ইনফর্ম করার কথা। কিন্তু পরীমনি যেহেতু এখানকার অতিথি তিনি সেটা জানেন না। আর এখন অনেক সুযোগ সুবিধা, যে কেউ ৯৯৯ এ কল করতে পারেন। সো উনার মনে হয়েছে ৯৯৯ কল করবেন।
ক্লাব সদস্যকে শোকজ:
যে সদস্যের মাধ্যমে পরীমনি ও তার সঙ্গীরা ক্লাবে এসেছিলেন তাকে শোকজ করেছে অল কমিউনিটি ক্লাব।
আলমগীর ইকবাল বলেন, ‘আমরা ক্লাব কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী যে সদস্যের মাধ্যমে তিনি (পরীমনি) এসেছিলেন তাকে আমরা শোকজ করেছি। তার বিরুদ্ধে ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, সেটি এখন চলমান রয়েছে। এটিই হলো আমাদের ক্লাবের সংশ্লিষ্টতা। অন্য কোনো ব্যাপারে আমাদের কিছু ঘটেনি।’
তিনি বলেন, ‘ক্লাবগুলোর নিয়ম হলো যিনি অতিথি, তিনি ক্লাবেরও অতিথি। ক্লাবের অতিথির বিরুদ্ধে ক্লাব কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়ার বিধান নাই। যার মাধ্যমে এসেছেন তিনি ক্লাবের নিয়ম কানুন জানেন। শুধুমাত্র তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান আছে। সেটি আমরা করতেছি। এর বাইরে অন্য কিছু করার আমাদের এখতিয়ার নেই। আর এমন ভয়ানক কিছু করে নাই যে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
ক্লাবের ওই সদস্য শোকজের জবাবও দিয়েছেন বলে জানালেন আলমগীর ইকবাল।
পরীমনির সঙ্গে আর কে কে এসেছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক ভদ্রলোক এসেছিলেন হাফ প্যান্ট পরে, আর একজন মহিলা ছিল। এটা রাত প্রায় সোয়া একটা দেড়টার ঘটনা।’
সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লাব প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘না, আমরা কোনো ডায়েরি করিনাই। কেন করিনাই; আমরা মনে করেছি যে, এতে আমাদের ক্লাবেরই সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। এজন্য আমরা জিডি করিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি উনি সেলিব্রেটি। যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমি উনাকে চিনি না। যদি উনি সেলিব্রেটি হয়, উনার মান সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব উনার নিজের। উনি উচ্চবংশের, উনি শিক্ষিতা, এটা উনার ডিউটি যে উনার মান সম্মান কীভাবে রক্ষা করবেন। এটা আমার ডিউটি না। আমার ডিউটি আমার মান সম্মান কীভাবে ধরে রাখব। যেমন: নায়ক শাকিব খান আমাদের ক্লাবের মেম্বার। উনি তো কোনো অসংলগ্ন আচরণ করছেন বলে আমার মনে পড়েনা। যার যার মান সম্মান তাকে বজায় রাখতে হবে। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।’
পরীমনির বিরুদ্ধে পুলিশের জিডি:
অল কমিউনিটি সেন্টারে পরীমনির ভাঙচুরের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। বলেন, ‘গত ৭ জুন রাতে কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগে তার (পরীমনির) বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।’ কবে এই জিডি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সম্ভবত ৭ জুন রাতে।’
জিডিতে কী বলা হয়েছে, জানতে চাইলে সুদীপ বলেন, ‘অভিযোগ যে, উনি আনঅথরাইজড ওখানে গেছেন। তারপর ক্লাব মেম্বারসদের যে জায়গা ছিল, ওখানে নাকি বসতে চেয়েছেন, তারপর নাকি ভাঙচুর করেছেন। এইগুলো আরকি।’